বেঙ্গলওয়াচ এর মুখোমুখি শ্যামলেন্দু মিত্র
১৯৭৭ সালের ১৪ জুন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন। ১৯৭৫ সালের আইএএস জহর সরকার মুসৌরি ট্রেনিং সেরে সদ্য এসেছেন কলকাতায়। তার প্রথম পোস্টিং বর্ধমান জেলায়। এডিএম।
ভোটের দিন তার ডিউটি ছিল জেলের বিভিন্ন প্রান্তে বুথে বুথে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট করানোর। সেইমতো সাত সকালে তিনি পুলিশের পাইলট ভ্যান নিয়ে বেড়িয়ে পরলেন।
বুথে বুথে ঢুকে দেখতে লাগলেন কেমন ভোট চলছে। যে বুথেই যান,তাকে ঘিরে ধরেন লোকজন। তাদের অভিযোগ,বুথের ভিতরে বাম প্রার্থীদের এজেন্টকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে জানতে চাইলে উত্তর পান, বাম এজেন্টরা স্বেচ্ছায় বুথ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। প্রিসাইডিং অফিসাররা কী করবেন !
সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল,প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র তরুণ আমলা জহরের বুঝে নিতে অসুবিধা হল না কারণটা কী।
তিনি বুথ থেকে বিতারিত বা স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া বাম প্রার্থীদের এজেন্টদের পুনরায় বুথের ভিতরে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের ধমক দিলেন।
এইরকম কয়েকটা বুথে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার কিচ্ছক্ষনের মধ্যে বর্ধমানের
জেলা শাসক তাকে পুলিস ভ্যানে থাকা ওয়ারলেসের মাধমে ধরলেন। জেলা শাসক জহর সরকারকে বললেন, এই মাত্র মহাকরণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ফোন করে বললেন, ‘কি হে, তোমার জেলার নাকি একজন নতুন আইএএস অফিসার জয়েন করেছ,সে তো সিপিএমের হয়ে কাজ করছে।’
‘বুদ্ধিমান’ জেলা শাসক আর দেরি করেননি। তিনি জহর সরকারকে নির্দেশ দিলেন, ‘তোমাকে আর বুথে বুথে ঘুরে ভোট দেখতে হবে। তুমি ফিরে এসো। হেড কোয়ার্টারে কন্ট্রোল রুমে বসো।’
জহরবাবু টগবগ করছিলেন,প্রথম ভোটের ডিউটি পেয়েছিলেন। কিছু করে দেখানোর তাগিদ ছিল।
মন ভেঙে গেল জহরের। কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম। ১৯৭৭ সালে তো নির্বাচন কমিশনের উপস্থিতি ছিল নগন্য। রাজ্যে ছিল মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের কেয়ার টেকার সরকার। ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যত অনুপস্থিতিতে জেলা জেলা শাসক ও ভোটের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের রাজ্য সরকারের কথা মতো চলতে হত।
নির্বাচন কমিশন বলে যে একটা স্বশাসিত প্রশাসন আছে তা তো বোঝালেন টিএন শেষন। আইএএস-এ প্রথম স্থান অধিকারি ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব শেষন ভারতের নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দিয়ে গিয়েছেন।
যাই হোক ভাঙা মন নিয়ে ভোটের দিনের বাকি সময় জহর সরকারকে বর্ধমান কালেকটরেটে জেলা শাসকের অফিসের কন্ট্রোল রুমে বসে দিন গুজরান করতে হল।
এবার এল ভোট গণনার দিন। জহর সরকারের দক্ষতার পরিচয় আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন জেলা শাসক। তাই তাকে গণনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়া হল না। শুধু গণনা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক করা হল। যাইহোক তিনি গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। গণনা কেন্দ্রে ঢুকে দেখলেন,গোটা হল ঘরের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে কংগ্রেস সমর্থিত সরকারি কর্মী ফেডারেশনের নেতাদের হাতে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা। জড়সড় হয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় দূরে জায়গা পেয়ে বসে আছেন বাম দলের প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা।
জহর সরকারের অনুসন্ধিতসু মন জানতে চাইল, ব্যালট বাক্সের ভিতরের খবর।
একটা একটা করে বাক্স উপুড় করে নির্দিষ্ট করা সাদা কাপড় দেওয়া টেবিলের ঢালা শুরু হল। ব্যালট পেপারের ভাজ খুলে ছড়িয়ে গেল টেবিলের ওপর। এক ঝলকে নমুনা দেখে চমকে উঠলেন তরুণ আমলা জহর। বুঝে গেলেন কংগ্রেস হেরে গিয়েছে। বাম দল সরকারে আসছে। সঙ্গে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল বুথে বুথে যা দেখেছিলেন,তার ছবি।
পরে জহরদা বর্ধমানের জেলা শাসক হয়েছিলেন। আমি বেশ কয়েকবার তার সরকারি বাংলোয় গিয়েছিলাম। তিনি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির একান্ত সচিব ছিলেন। কলকাতায় ফিরে শিল্প সচিব সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সচিব হন। তিনি হয়েছিলেন বাংলার মুখ্য নির্বাচনী অফিসার। সেই সময় তার কাছেই এইসব শোনা। জহরদাকে বাম সরকার স্বরাষ্ট্র সচিব ও মুখ্যসচিব করেনি। তিনি দিল্লি চলে যান। প্রসার ভারতীর সিইও হয়ে অবসর নেন।
মহাকরণ থেকে বিদায় নিলেন সিদ্ধার্থ রায়,পাশে ছিলেন স্ত্রী মায়া।
এরপর দীর্ঘ বছর আর কংগ্রেস বাংলার মাটি পায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কংগ্রেস মহাকরণে ঢুকে ছিল ২০১১ সালে। তাও বিধি বাম। হারাতে হল মহাকরণের আংশিক ক্ষমতাও।
১৯৭৫ সালের দেশজুড়ে যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির পরামর্শদাতা ছিলেন মানু অর্থাত সিদ্ধার্থ রায়। তাকে মানু বলেই ডাকতেন ইন্দিরা।
ইন্দিরা জরুরি অবস্থা জারি করে প্রায় সব বিরোধী নেতাদের জেলা পুড়েছিলেন। বাদ ছিলেন সিপিএমের জ্যোতি বসু সহ কিছু ভাগ্যবান। অটলবিহারি বাজপেয়ী জেল থেকে ইন্দিরা গান্ধিকে বার্তা পাঠান,তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলনকে সমর্থন করেন না। বাজপেয়ী ছাড়া পান।
পাটনায় জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বিরাট জনসভা থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ সেনাবাহিনীকে ব্যারাক ছেড়ে বেরিয়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ডাক দিলেন। সেই খবর সরকারি সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রচার করল। পিটিআইয়ের সেই ক্রিড নিয়ে ইন্দিরার গান্ধীর অফিসে ঢুকলেন তার এক বিশ্বস্ত অফিসার। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। ইন্দিরা সেটা দেখলেন। চোখমুখ লাল হয়ে গেল। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হল রাতেই। ইন্দিরা ফোন করলেন মানুকে। তিনি উড়ে গেলেন দিল্লিতে। ঠিক হল দেশে জরুরু অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্ত হল। অর্ডিনান্সের খসড়া করার ভার পরল মানুর ওপর। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হতে রাত ১২ টা বেজে গেল। আগেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফোন করে জেগে থাকতে বলেছিলেন। অধিক রাতে ঘুম চোখে জরুরি অবস্থা ঘোষনার অর্ডিনান্সে সই করলেন রাষ্ট্রপতি। এসবই সিদ্ধার্থ রায়ের কাছে তার বেলতলার বাড়িতে বসে শোনা। তার আপ্ত সহায়ক আশফাক প্রায়ই ফোন করে সাংবাদিকদ্ব্রের বলতেন,স্যার ডাকছেন। আমরা অনেকেই যেতাম। তার তখন কাজ নেই,মামলা করা ছাড়া। হাফ প্যান্ট আর রঙিন গেঞ্জি পরে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতেন। লেখার জন্য বলতেন না। প্রায়ই বলতেন,’আমাকে তোমরা জরুরি অবস্থার জন্য দায়ী করো,আসলে দায়ী ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধি। সেই জরুরি অবস্থার কুফলের জন্য দায়ী। সঞ্জয়ই জরুরি অবস্থাকালীন ডিফেক্টো প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছিল। মুম্বাইয়ে সংবাদপত্রের ইলেক্ট্রিক লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। আমি স্বীকার করছি ,সংবাদপত্রের ওপর প্রেস সেন্সরশিপ বসানো ঠিক হয়নি। এর ফলে জরুরি অবস্থা তোলার পর কংগ্রেস প্রেসের শত্রু হয়ে যায়। আনন্দবাজারের সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত ও গৌরকিশোর ঘোষকে গ্রেফতার করা আমার ভুল ছিল’। এরকম অনেক কথা তিনি বলতেন। কেন বলতেন,তা হয়তো পাপ স্খলনের জন্য হতে পারে। তিনি মারা যাওয়ার আগে একবার টিভিতেও ইন্দিরা ও সঞ্জয় গান্ধির নামে অনেক কথা বলেছিলেন।
বরুণবাবু ও গৌরদাকে গ্রেফতারের পর সিদ্ধার্থ রায় আনিন্দবাজার অধিগ্রহণ করতে যান। এই ব্যাপারে তিনি ইন্দিরা গান্ধিকে বেশ কয়েকটা চিঠি লিখে তার অনুমোদন চান। এই খবর আনন্দবাজারের মালিকপক্ষের কাছে আসে। মালিকদের নির্দেশে সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত এই নিয়ে কথা বলেন সিদ্ধার্থ মন্ত্রিসভার বিদ্যুতমন্ত্রী বরকত গনিখান চৌধুরিকে । গনিখান ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীতে। তিনি ও সুখরঞ্জনদা যান দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে। ইন্দিরা তখন জরুরি অবস্থা নিয়ে জেরবার। গনিখান তার অফিসে বসে থেকেও দেখা করতে না পেরে চিতকার করতে থাকেন। খবর যায় ইন্দিরার কাছে। ডাকা হয় তাকে। কী ব্যাপার চিতকার করছিলে কেন বরকত ? গনিখান বলেন, ‘ম্যাডাম, মানু ইজ গোয়িং টু টেক ওভার আনন্দবাজার পেপার। আনন্দবাজার ওনারস আর কংগ্রেস। ডু ইউ ওয়ান্ট টু ওয়াইপ আউট কংগ্রেস ফ্রম বেঙ্গল ,দেন ডু ইট।’
ইন্দিরা বেল টিপলেন। একজন অফিসার এলেন। বললেন, গিভ মি দ্য ফাইল। ফাইল এল। দেখা গেল,বেশ কয়েকটা চিঠি। তাতে আনন্দবাজার কেন অধিগ্রহণ করা দরকার তার প্রস্তাব। ক্ষিপ্ত ইন্দিরা বললেন, ‘কানেক্ট মানু।’ ফোনের ওপারে সিদ্ধার্থ রায়। ফিউরিয়াস ইন্দিরা,’ ইস দিস ইয়োর বিজিনেস টু টেক ওভার নিউজপেপার ! ‘ ফোন ছেড়ে দিলেন। আর তার সচিবালয়কে নির্দেশ দিলেন, ডেস্ট্রয় অল লেটার্স অব মানু ইন দিস রিগার্ড।
আনন্দবাজারের আর বসুমতি হওয়া হল না।
সব জেনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন সিদ্ধার্থ রায়। আনন্দবাজার অফিস পুলিশ দিয়ে রেড করানো হল। আনন্দবাজারের কাগজের ভ্যান পুড়িয়ে দিল কংগ্রেসিরা। গ্রীস্মের সময় পুরুলিয়ার জেলা শাসককে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী,তোমার ওখানে কীরকম গরম ? জেলা শাসক জানালেন,মারাত্মক গরম। রাস্তা দুপুরে জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমরা অফিসে কাজ করতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী বললেন,খুব ভাল। আমি সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তকে পুরুলিয়ার জেলে পাঠানোর জন্য জেল দফতরকে বলে দিচ্ছি। তুমি দেখো,ওর খাওয়া দাওয়ার যেন সমস্যা না হয়। প্রবল গরমে পুরুলিয়া জেলে পাঠানো হল বরুণবাবুকে। জেলে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার অপরাধে আনন্দবাজারের সাংবাদিককে নিশীথ দে গ্রেফতার হলেন।
চালু হয়ে গেল প্রেস সেনসরশিপ। মহাকরণের প্রেস কর্ণারে তালা মেরে দেওয়া হল। মহাকরণের একতলায় চালু হল নিউজ সেন্সরশিপ বিভাগ। তার দায়িত্বে ছিলেন গোপাল ভৌমিক নামে এক অফিসার। প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রের অফিস থেকে পরের দিন যা ছাপা হবে তার কপি পাঠাতে হন। গোপালবাবু ও তার একদল কর্মী সেগুলি পড়ে যেগুলি অনুমোদন করতেন তা ছাপা হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির….’ উদ্ধৃতি কেটে দেওয়া হয়। যুক্তি ছিল,এটা সরকার বিরোধী।
এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটল। দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়ে যাওয়া একটি ব্যঙ্গাত্মক লেখা বাতিল করল সিদ্ধার্থ রায়ের সরকার। সেটা ছিল সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষের ছদ্মনামে। তিনি গৌরানন্দ কবি ভনে ও রূপদ্র্শী নামে লিখতেন। দেশ পত্রিকা সেই ছাপা হয়ে যাওয়া লেখা কেটে ফেলে পুড়িয়ে দিয়ে বাজারে ছাড়ল। গৌরকিশোর ঘোষকে তার আগেই তার বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
দেশ পত্রিকা অফিস থেকে সেই বাতিল করে দেওয়া লেখার পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে তা দেন জনতা পার্টির এক সক্রিয় কর্মী হিমাংশু হালদার। তা পুলিশ জানতে পেরে তাকে সেই লেখা সহ বৌবাজারের হোটেল থেকে গ্রেফতার করে।
জরুরি অবস্থার সময় মিসা আইনে সব গ্রেফতার করা হয়। যুক্তি ,যাদের গ্রেফতার করা হয়,তারা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় দুর্নীতি করেছেন বা স্বজন পোষন করেছেন,এই অভিযোগ কেউ করতে পারেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন প্রতি হিংসা পরায়ণ। নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে ওয়াঞ্চু কমিশন বসিয়ে সকলকে ভয় দেখিয়েছিলেন।
এর মধ্যে তার খাদ্যমন্ত্রী কাশিকান্ত মৈত্র ভুষি কেলেঙ্কারির দায়ে পদত্যাগ করলেন। তার আপ্ত সহায়ক অরুন দাশগুপ্ত গ্রেফতার হলেন। পরে দেখা যায় ভূষি কেলেঙ্কারির সঙ্গে মন্ত্রী জড়িত ছিলেন। মন্ত্রীর নাম করে কম দামের ভুষির পারমিট কালবাজারে বিক্রি করে দেওয় হন। এক ব্যবসায়ী ও এক খেলোয়ার ছিল এই চক্রে। তারাও গ্রেফতার হয়েছিল। পদত্যাগ করে কাশিকান্তবাবু সিদ্ধার্থ রায়ের সরকারের বিরুদ্ধে অনেক মামলা লড়েছিলেন।
সিদ্ধার্থ রায়ের আমলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিল। কোলাঘাট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র,নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সহ রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু তার সব ভাল কাজ ঢেকে গিয়েছে নানা অপকর্মে।
তিনি পাঞ্জাবের রাজ্যপাল হিসাবে জঙ্গী দমন করেছিলেন। নিজে ভাল ব্যারিস্টার ছিলেন।
তিনি তিনবার ভোটে দাড়িয়ে তার জামানত জব্দ হয়েছিল। একবার চৌরঙ্গি বিধানসভা থেকে জিতে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন। তিনি জ্যোতি বসুর পুলিশ বাজেটের বিরুদ্ধে তথ্যমূলক ভাষণ দিয়েছিলেন। তা অনেকেরই মন কেড়ে ছিল।
তার সঙ্গে জ্যোতিবাবুর দারুন সখ্যতা ছিল ব্যাক্তিগত স্তরে। তিনি জ্যোতিবাবুকে তার ডাকনাম ‘ গণা’ বলে ডাকতেন। জ্যোতিবাবুও তাকে বলতেন ‘মানু’ নামে।
একবার জ্যোতিবাবু দু:খ করে সিদ্ধার্থ রায়কে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলে চন্দন বকে যাচ্ছে। কী যে করি ওকে নিয়ে।’ সিদ্ধার্থ রায় ফোন করলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী সেখ আবদুল্লাকে। বললেন,তোমার কাশ্মীর মেডিকেল কলেজে জ্যোতি বসুর ছেলেকে ভর্তি করতে হবে,তোমার তো কোটা আছে।
কিছুদিনের মধ্যে জ্যোতিবাবুর ছেলে চন্দন বসু ভর্তি হয়ে গেল। কিন্তু এমবিবএস কোর্স শেষ করেনি চন্দন। ফিরে আসে কলকাতায়।
তখন এরাজ্যে ডাক্তারিতে ভর্তির কোনও কোটা ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী মেডিকেলে ১৫ টা কোটা চালু করেছিলেন। তাতে অগা-বগা ছেলেরা ভর্তি হয়ে ডাক্তার বনে গিয়েছে। তবে এই কোটার সুযোগ পেয়েছিল অনেক বিরোধী নেতার ছেলে মেয়েরা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তীব্র আপত্তিতে সিপিএমের সিদ্ধান্তে জ্যোতি বসুর রাজত্বকালের শেষের দিকে মেডিকেলে কোটা তুলে দেওয়া হয়।
সিদ্ধার্থ রায় বোলপুর লোকসভা আসনে দাড়ালেন। বর্তমানের সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত তাকে নিয়ে একটা বড় লেখা লিখলেন। খুব সম্ভবত সেটস রবিবারে এক পাতা জুড়ে ছাপা হয়েছিল। তাতে হেডিং ছিল,’ সিদ্ধার্থ রায় থার্ড ক্লাস লায়ার’ । অর্থাত,তৃতীয় শ্রেণির মিথাবাদী।
সিপিএম ম্যাটাডোর ভরে সেই কাগজ কলকাতা থেকে বোলপুরে পাঠিয়েছিল। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি বিলি হয়েছিল।
অদ্ভুত ব্যাপার,যে সিদ্ধার্থ রায় আনন্দবাজারকে টুটি টিপে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন,সেই আনন্দবাজার প্রত্যেকটি ভোটে তার হয়ে প্রচার করেছিল। তবে,প্রত্যেকবারই তার জামানত জব্দ হয়েছিল।