বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: ভারত তথা বাংলার ইতিহাসে ৯ সেপ্টেম্বর হয়ে উঠলো একটা রেড লেটার ডে – স্মরণীয় দিন। ঠিক এক মাস আগে এমনই এক ৯ তারিখ ঘটে গিয়েছিলাম এক মর্মান্তিক ঘটনা। আর তার পরের ৯ তারিখ আর্থাৎ আজকে ভারতের শীর্ষ আদালতে ওই ঘটনার শুনানি ছিল আর আধিকারিকদের নিয়ে নবান্নে সভা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সারা দেশ তাকিয়ে ছিল তাঁদের বার্তার দিকে। এদিনের শুনানিতে সলিসেটর আইনজীবী প্রথমে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বিকৃত করার অভিযোগ তোলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ় করল সিবিআই। তারইমধ্যে আইনজীবী দাবি করলেন যে ময়নাতদন্তের সময় যাঁরা হাজির চিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই উত্তরবঙ্গ লবির সদস্য। যে লবির বিরুদ্ধে রাজ্যে স্বাস্থ্য দুর্নীতি চক্র চালানোর অভিযোগ উঠেছে। শুনানির শুরুতেই এসজি তুষার মেহতার এভাবে বড় অভিযোগ এনেছেন। রাজ্যের তরফে অনেক কিছুই লোকানো হয়েছে বলেই অভিযোগ তুললেন তুষার মেহতার।
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কলকাতা পুলিশ পুরো সার্চ সিজারের ফুটেজ সিবিআই কে দিয়েছে? সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, আমাদের কাছে মাত্র ২৭ মিনিটের চারটি ক্লিপিং দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয় নিহত তরুণী ডাক্তারের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, ময়নাতদন্ত কখন করা হয়েছে— সেই সময়ের উল্লেখ নেই। আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, “দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ১০ বার জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। পুরোটা পরে তৈরি করা হয়নি তো? অনেক রহস্য রয়েছে।” প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকার ও পুলিশ কি কিছু গোপন করতে চাইছে?
এদিকে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন,
“ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। নিগৃহীতার পরিবার টাকার অফার করা হয়েছিল। যাতে পরিবার পুলিশের সুরেই কথা বলে। এই বিষয়টিও দেখার প্রয়োজন রয়েছে।” শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এবিষয়ে আলাদা করে কোনও স্টেটাস রিপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা এই মামলারই অংশ।” পরবর্তী রিপোর্টে সিবিআই-কে এই বিষয়টিও উল্লেখ রাখার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ১০ তারিখ বিকেল ৫ টার মধ্যে আপনারা অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিয়ে কাজে যোগ দিন। ইতিমধ্যে মানুষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, অনেকে মারা গেছেন। কিন্তু এবার আপ আপনাদের কাজে যোগ দিতে হবে।
এদিকে আজকেই নবান্নে সভা করার পরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন,”নীরবে বেদনা সহ্য করছি। পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বারন করেছি। কিন্তু দয়া করে মানুষকে পরিষেবা দিন” মমতা আরো বলেন, ২৩ জন মারা গিয়েছেন। অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গিয়ে বাড়িতেও মারা গিয়েছেন। সেই কেসগুলো বুথ লেভেল থেকে খোঁজ নাও। তার পরেই তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে মমতা বলেন,বাংলার নামে বদনাম হচ্ছে। বাংলাদেশের পরে এই সুযোগটা নিচ্ছেন তো? পুলিশ সারারাত পাহারা দেয়। পুজো থেকে দুর্যোগ, সবক্ষেত্রে পাহারা দেয়। প্রতিদিন রাতে যদি আপনারা রাস্তায় থেকে… অনেক মানুষ তো বিড়ম্বনাতেও পরে। তিনি বলেন,’আমি অনুরোধ করব, পুজোতে ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। আর সিবিআইকে বলব তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন। এটা তো এখন আপনাদের হাতে আমাদের হাতে নেই। এখন সাজা পুরো সিবিআইয়ের হাতে। নির্যাতিতার পরিবারকে বিচার দিন। সকলেই বিচারের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এর পরেই CPর পদত্যাগ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনার নিজে এসেছে আমার কাছে পদত্যাগ করার জন্য। গত সাতদিন আগে এসেছে। সামনে পুজো। ল’ অ্যান্ড অর্ডার তো যে থাকবে দায়িত্বে তাকে জানতে হবে। পুজোর সময়। কিছুদিন ধৈর্য ধরলে কী হয়? এরপরে তিনি আবার CBI প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, কেন CBI তদন্ত শেষ করতে এতো সময় লাগাছেন? আপনারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীকে চিহ্নত করে আদালতে পেশ করুন।