বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:: শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা(১৭ জুন) আমাদের সামনে অনেক প্রশ্ন তুলে দিলো। প্রশ্ন তুলে দিলো ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে, মালগাড়ির চালক নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন! ফলে ফিগানাল দেখতে পান নি।

এই ঘটনা সত্য না অসত্য – তা তদন্তে জানা যাবে। কিন্তু এই বিষয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত রাজধানী এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট বিজয় বাহাদুর সিং। নিয়ম অনুযায়ী, আট থেকে দশ ঘণ্টা মালগাড়ির লোকো পাইলটরা নিজের পরিষেবা দিতে পারবেন। অভিযোগ উঠছে তাঁদের দিয়ে ১৬-১৭ ঘণ্টা রেক চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রক এবং রেল বোর্ডের কাছে বারবার উত্থাপন করা হলেও, লোকো পাইলট নিয়োগের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। তিনি বলেন, “ওভার ডিউটি করার কারণ অন্য। আট ঘণ্টার বেশি কাজ করানো উচিত নয় এটাই নিয়ম। কিন্তু অবাক হয়ে যাবেন ১০ ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টা তিনি ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছেন।”

ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেই কি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা? এই প্রশ্নটি সযত্নে এড়িয়ে গেলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। তিনি বলেন,”এটা রাজনীতি করার সময় নয়। এখন সবার আগে উদ্ধারকাজের উপর নজর দেওয়া দরকার। যাত্রী নিরাপত্তার দিকে সম্পূর্ণ ফোকাস রয়েছে।” কিন্তু সত্যিই কি যাত্রী নিরাপত্তায় ফোকাস রয়েছে? তবে সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে পড়ে তিনি বলেন, “কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির রিপোর্ট এলেই এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে ‘কবচ সিস্টেম’ নিয়ে। রেল বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে আগেই জানিয়েছিল, সর্বত্র ‘কবচ সিস্টেম’ চালু হচ্ছে। যাত্রী সুরক্ষায় এই হাইটেক কবচ সিস্টেম। কিন্তু সেই ‘কবচ’ এখনও বসে ওঠেনি সব লাইনে। বাংলার কোনো ট্র্যাকে এখনও বসেনি কবচ প্রযুক্তি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর জানাল রেল বোর্ড। বাংলার ক্ষেত্রে কবচ প্রযুক্তি এখনও পরিকল্পনার আওতাতেই রয়েছে। দেশে এখনও পর্যন্ত মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার রেল ট্র্যাকেই বসেছে কবচ সিস্টেম। দুর্ঘটনার পরেই জানা গেলো এই তথ্য।

তবে এর মধ্যেই পিটিআই একটি নতুন তথ্য সামনে আসলো। রাঙাপানি ও ছত্তরহাটের মধ্য়ে যে সিগন্যাল সিস্টেম ছিল সেটা ১৭জুন ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। রেলওয়ে সোর্সের কথা উল্লেখ করে এই কথা জানিয়েছে পিটিআই।

ঘটনা যাই হোক, একথা স্বীকার করতেই হবে, অত্যাধুনিক ট্রেন চালু হচ্ছে, এসেছে দূরন্ত, শতাব্দী,বন্দে ভারত, অমৃত ভারতের মতো দূরন্ত গতির ট্রেন, কিন্তু চালু হয় নি কবচ সিস্টেম। যতটা নজর দেওয়া হয়েছে ভোটমুখী নতুন ট্রেন চালু করার দিকে, ততটা নজর দেওয়া হয় নি যাত্রী সুরক্ষায়। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *