বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: ফুচকাওয়ালার ছেলে চাকরি পেলেন ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে (বিএআরসি)। কোচবিহার শহর সংলগ্ন চকচকা গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলকুঠির হাট এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস বিএআরসি-তে সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

 

দু’দিন আগেই বাড়িতে তাঁর নিয়োগপত্র এসে পৌঁছেছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রে সেন্টারের হেড অফিসে তিনি কাজে যোগ দেবেন। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই কোচবিহার শহর সংলগ্ন এলাকায় খুশি ছড়িয়েছে। প্রসেনজিতের স্বপ্ন, আগামীদিনে ইসরোতে কাজ করার।

প্রসেনজিৎ বলেন, ‘নিয়োগপত্র পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। অবশেষে পরিশ্রমের ফল পেলাম। আমার এই নিয়োগপত্র পাওয়ার পেছনে স্কুলের শিক্ষক-বন্ধুবান্ধবদের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সহযোগিতা রয়েছে আমার বাবার।’ প্রসেনজিতের আগামীদিনে মেকানিক্যালে হায়ার স্টাডিজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি দেশের সেবা করতে চান।’

কোচবিহার শহরের রেলগুমটি এলাকা থেকে মেরেকেটে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরেই চকচকা গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলকুঠির হাট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশেই রয়েছে প্রসেনজিৎদের বাড়ি। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। প্রসেনজিৎ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কোচবিহার শহরের পলিটেকনিক কলেজ থেকে ২০১৯ সালে ৭৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন। ২০২১-’২২ সালে দিনহাটায় আইটিআইতে একবছর টেকনিসিয়ানের কোর্সও করেছেন। এর মধ্যে জামশেদপুরের এনআইটিতে টেকনিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ওয়ার্কশপে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন। যদিও শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত মেধাতে হয়নি। আইটিআই খড়্গপুরেও মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছেন। একইভাবে সেখানেও চূড়ান্ত মেধাতে গিয়ে আটকে যান। অপরদিকে ইসরোর টেকনিকাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে লিখিত পরীক্ষায় একবার ও টেকনিসিয়ানে তিনবার পাশ করেছেন তিনি। এখানেও মেধাতে আটকে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। অবশেষে দু’দিন আগে বাড়িতে তাঁর এই নিয়োগপত্র এসে পৌঁছায়। বাড়ির একমাত্র ছেলে এমন চাকরি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে দাসবাড়িতে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আনন্দে বাবা সুকুমারের চোখ গড়িয়ে পড়ে জল।

সুকুমার বললেন, ‘আমার মা আমাকে ভিক্ষা করে খাইয়েছেন। সেই জায়গায় আমি সবসময় চাইতাম আমার ছেলে যেন লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আজ আমি খুশি।’ চকচকা স্কুলের শিক্ষক দেবদূত দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের ছাত্র এমন সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *