নদীয়া:
ইতিহাসে উল্লেখ অনুযায়ী সময়কাল টা ষোল শতকের প্রথমার্ধ,  আনুমানিক ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তন্ত্র ও বৈষ্ণব ধর্মের পিঠস্থান তথা অখন্ড ভারত বর্ষ সহ সারা বিশ্বের জ্ঞানচর্চার পূর্ণ ভূমি ও চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভূমি নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থের প্রণেতা শক্তি সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ভট্টাচার্য।

পৌরাণিক চন্ডীমাহাত্ম্যে উল্লেখ অনুযায়ী কাল্পনিক দেবী কালিকা উগ্ররুপা। দেবী কৃষ্ণবর্ণ তনু বিশিষ্ট। তাঁর ঘন কালো কেশ হাঁটুর তল পর্যন্ত বিস্তৃত, রক্তবর্ণ হরিণী রুপি চক্ষুদ্বয় ও টকটকে রক্ত জবার ন্যায় বাহিরে প্রদর্শিত জিহ্বামায়ের ভয়ংকরী রূপ নিদর্শন করে। প্রসঙ্গত দুর্দন্ডপ্রতাপে ডাকাতেরা এই রুপ কাল্পনিকমূর্তির আরাধনা করত বলে জানা যায় পৌরাণিক কাব্য থেকে।

তন্ত্রসাধক আগমবাগীশ দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁর তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে মাতা কালিকার এই ভয়ঙ্করী রুপের বদলে মমতাময়ী স্নিগ্ধা কোমল রূপের দর্শন পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে একদিন রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে প্রবাদপ্রতিম তন্ত্রসাধক আগমবাগীশ এক স্বপ্নাদেশে মা কালীর ভয়ংকরী রুপের পরিবর্তে মমতাময়ী স্নিগ্ধা কোমল রূপ দর্শনের নির্দেশ পান। এবং সেই দৈববাণীর নির্দেশ অনুযায়ী তিনি নবদ্বীপের বর্তমান আগমেশ্বরী পাড়ায় পঞ্চমুন্ডির আসন স্থাপন করে ও মায়ের কমলময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে আরাধনা শুরু করেন।

সাধক আগমবাগীশের নামানুসারে নব মূর্তিরুপি মা কালীকার নাম হয় আগমেশ্বরী মাতা যা আজও পর্যন্ত প্রতিবছর কালী পূজার রাতে নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়ায় মা আগমেশ্বরী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন।

তবে অনেকের মতে এই পুজাই প্রাচীনতম দক্ষিণা কালী পূজা হিসেবে পরিচিত। সর্বত্র দেবী কালীর তন্ত্র মতে পূজার্চনা হলেও আগমেশ্বরী মাতার পূজা হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে।

আগমবাগীশের নির্দেশানুসারে কোন রূপ বলি প্রথা সহ আমিষ জাত খাদ্যদ্রব্য ও কারণ সুধা ছাড়াই মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়। এখানে মা আগমেশ্বরী সম্পূর্ণ বৈষ্ণবী রূপে পূজিত হন। তন্ত্রসাধক আগমবাগীরশ নির্দেশিত পথে কার্তিক মাসের পঞ্চমী তিথিতে খড় বাঁধা দিয়ে মাতৃ মূর্তি নির্মাণের সূচনা হয় ও অমাবস্যা লাগার পর মায়ের চক্ষুদান করা হয়।

তৎকালীন সময়ে পূজার্চনা সম্পূর্ণ হবার সাথে সাথে মায়ের বিসর্জন হয়ে যেত। তবে এখন সে নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে দুপুর নাগাদ আনুমানিক ৮৪ জন বাহকের কাঁধে চেপে নবদ্বীপ পিরতলা স্থিত এক বিশেষ জলাশয় মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ভট্টাচার্যের প্রতিষ্টিত আগমেশ্বরী মাতা আজও পৌরাণিক ঐতিহ্য কে বহন করে চলেছে বৈষ্ণব তীর্থ চৈতন্য ভূমি নবদ্বীপে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here